প্রচ্ছদ > খেলা > অন্যান্য

চেয়ার আলগা হচ্ছে তাঁদের

article-img

কক্সবাজারে বেড়ে ওঠা মাহমুদুল ইসলাম রানা তরুণ বয়সে মায়ানমারে গিয়ে মার্শাল আর্ট শেখেন। এরপর ঢাকায় এসে যুক্ত হন জুডো ও কারাতে ফেডারেশনের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে কোরিয়ান মার্শাল আর্ট তায়কোয়ান্দোতে আকৃষ্ট হলে ১৯৯৫ সালে গড়ে তোলেন তায়কোয়ান্দো অ্যাসোসিয়েশন। দুই বছরের মাথায় সেই অ্যাসোসিয়েশন ফেডারেশনের স্বীকৃতি পায়।

 

রানা হন তাঁর প্রথম সাধারণ সম্পাদক। অদ্যাবধি সেই পদেই আছেন তিনি।

 

দীর্ঘ ২৭ বছর একটি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ার ধরে রাখা রানাই একমাত্র উদাহরণ নন, ক্রীড়াঙ্গনে এমন আরো বেশ কয়েকজনই আছেন, কারো কারো এই চেয়ারের সঙ্গে বন্ধন এর চেয়েও বেশি। যেমন—তাবিউর রহমান।

 

 

ষাটের দশকের এই কুস্তিগীর পালোয়ান নামেই বেশি পরিচিত ক্রীড়াঙ্গনে। স্বাধীনতার পর সংগঠক হিসেবে খেলাটির সঙ্গে জড়ান। প্রথম সাধারণ সম্পাদক হন তিনি ১৯৭৮ সালে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, মাঝখানে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সেনাশাসিত সময়টুকু বাদ দিলে ৪৪ বছর ধরেই কুস্তি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তিনি।

 

ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কার নিয়ে সোচ্চার সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা কামরুননাহার ডানা এমনতর সংগঠকদের উদ্দেশ করেই বলেছেন, ‘যাঁরা ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে ফেডারেশনগুলোতে, তাঁদের তো সেই খেলাকে বিশ্বকাপে নিয়ে যাওয়া উচিত।’ অথচ কোনো কুস্তিগীর আজ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারেননি, কোনো ক্যাটাগরিতে। ২০২২ সালে সেই পালোয়ান জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন, যেন এত দিন চেয়ার ধরে রাখতে পারাই তাঁর বড় কৃতিত্ব। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন আসাদুজ্জামান কোহিনুরও। হ্যান্ডবলের সাধারণ সম্পাদক তিনি ১৯৯১ সাল থেকে।

 

 

এরপর দেশে কত রাজনৈতিক উত্থান-পতন হয়ে গেল, ৩৩ বছরের ব্যবধানে আরো একটা গণ-অভ্যুত্থানও দেখেছে দেশ, কিন্তু হ্যান্ডবলে কোহিনুরের চেয়ারটা বদলায়নি। যদিও এবারের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের সঙ্গে ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের যে হাওয়া উঠেছে, তাতে সেই রানা-পালোয়ান-কোহিনূরদের চেয়ার আলগা হতে যাচ্ছে বলেই খবর।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ফেডারেশনের মূল দায়িত্ব অর্থাৎ সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন তাঁদের আর না রাখার নির্দেশনা পেয়েছে সার্চ কমিটি। সাবেক ব্যাডমিন্টন তারকা জোবায়দুর রহমান রানার নেতৃত্বাধীন সেই কমিটি পরবর্তী সময়েও যাতে একই চর্চা অব্যাহত না থাকে, সেই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। ‘খুব সম্ভব আমরা নিয়ম করে দেব যে দুই মেয়াদের বেশি কেউ ফেডারেশনের দায়িত্বে থাকতে পারবে না’, বলেছেন জোবায়দুর রানা। কোহিনূর সেই প্রক্রিয়াকে স্বাগতই জানিয়েছেন, ‘যা করলে ক্রীড়াঙ্গনের ভালো হবে, তাতে আমি সহযোগিতা করতে রাজি আছি। তা ছাড়া আমি নিজে থেকেও ভাবছি এই দায়িত্বে আর থাকব না। সামনেই একটি এজিএম করে কাউন্সিলরদের সবাইকে জানিয়ে আমি সরে যাব।’

যদিও দায়িত্বে বারবার পরিবর্তনেও সুফল আসবে কি না কোহিনূর নিশ্চিত নন, ‘অ্যাথলেটিকস, শ্যুটিং, সাঁতারের মতো বড় ফেডারেশনগুলোতে তো নিয়মিতই ব্যক্তি পরিবর্তন হয়। কিন্তু তারাই বা কতটা এগিয়েছে?’ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হ্যান্ডবলের উল্লেখযোগ্য সাফল্য না থাকার প্রসঙ্গ তুলতেই কোহিনূর অন্য এই দিকটি দেখিয়েছেন। অনেকটা তেমনই মনোভাব তায়কোয়ান্দোর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম রানার, ‘আমি যেভাবে পারি, যুদ্ধ করে হলেও দেশকে আন্তর্জাতিক পদক এনে দিয়েছি। তিনটি এসএ গেমসে আমি সোনা এনেছি। এখন কয়টা ফেডারেশন তা করে দেখাতে পেরেছে। তবু যদি সরকার মনে করে, আমি না থাকলে খেলাটা এগোবে, আমি সরে যেতে তৈরি। আমি আমার অধীনে সে রকম তরুণ সংগঠক তৈরিও করেছি।’

তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মেয়াদকাল নদীর মতো এমন দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে যে বক্তব্যটা পাওয়া যায়, তা হলো ফেডারেশনের অন্যদের চাওয়ায়ই পদ ধরে রাখতে হয়েছে তাঁদের। ভলিবল ফেডারেশনে আশিকুর রহমান মিকুর সাধারণ সম্পাদক হিসেবেই যেমন ২৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০০১ সালে সেই যে প্রথম একবার নির্বাচন করে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি, তার পর থেকে সেই নির্বাচনের আর প্রয়োজন পড়েনি। কমিটির অন্য পদগুলোতে অনেক ভাঙা-গড়া হলেও প্রতিবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মিকু। ক্রীড়াঙ্গনের দীর্ঘজীবী এই সংগঠকদের সময় শেষ হতে চলল এবার। শুধু তা-ই নয়, মিকু নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘ ৩৮ বছর। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু তাঁর, মেয়াদকাল ফুরিয়েছে এ বছরই নতুন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এসে যখন দেশের সব কটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে দিলেন। এবার সেই সংস্কারে পালোয়ান, কোহিনূর, রানা মিকুরা কাটা পড়ছেন ফেডারেশন থেকেও।